• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৬ জুন, ২০২৫, ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
Bancharampur Barta
Bongosoft Ltd.

বাঞ্ছারামপুরে সরকারি বাসভবন দখল


বাঞ্ছারামপুর বার্তা | স্টাফ রিপোর্টার জুন ৪, ২০২৫, ০৫:৪৬ পিএম বাঞ্ছারামপুরে সরকারি বাসভবন দখল

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলা পরিষদের সরকারি কোয়ার্টারগুলোতে অনুমতি ছাড়া বিনা ভাড়ায় অবৈধভাবে বসবাস করছেন একাধিক বহিরাগত পরিবার ও বিভিন্ন অফিসে কর্মরত অফিসার ও কমচারীরা। যথাযথ অনুমতি কিংবা উপজেলা পরিষদের কর্মচারী না হয়েও অনেকে বছরের পর বছর ধরে দখল করে রেখেছেন সরকারি এসব বাসভবন। শুধু তাই নয়, এই সকল ব্যক্তিরা অবৈধভাবে গ্যাস সংযোগ নিয়ে রান্নাবান্না চালিয়ে যাচ্ছেন দিব্যি। এতে একদিকে যেমন বাড়ছে নিরাপত্তা ঝুঁকি, অন্যদিকে সরকার হারাচ্ছে লাখ লাখ টাকার রাজস্ব। নেই কোনো বৈধ অনুমতি, নেই কোনো ভাড়া বা চুক্তিপত্র। তারপরও সরকারি স্থাপনা ও সেবার অপব্যবহারে সরকার রাজস্ব হারালেও ব্যবস্থা নিচ্ছেনা উপজেলা প্রশাসন।এভাবে সরকারি সম্পদ অপব্যবহার করে ব্যক্তিস্বার্থে ব্যবহার এক ধরনের দুর্নীতি, যা বন্ধ হওয়া উচিত। এ নিয়ে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো কার্যকর উদ্যোগ এখনও দেখা যায়নি। 
জনমনে প্রশ্ন উঠছে সরকারি সম্পদের এমন অপব্যবহার ও অব্যবস্থাপনা কারা করছে, কারা দেখেও না দেখার ভান করছে?
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলা প্রতিষ্ঠার সময় উপজেলা পরিষদের কমকর্তা কমচারীদের  থাকার জন্য উপজেলার পরিষদ চত্বরে সাতটি দ্বিতল ভবন নির্মাণ করা হয়। এর মধ্যে বতর্মানে চারটি ভবনে অন্তত ১১টি ফ্লাটে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে বসবাস করে আসছেন একাধিক বহিরাগত পরিবার ও বিভিন্ন অফিসে কর্মরত অফিসার ও কর্মচারীরা। এসব কোয়ার্টারে পূর্ব থেকে থাকা গ্যাস সংযোগ থেকে নিজেরা লাইজারে রেগুলেটর লাগিয়ে তারা অবৈধভাবে সংযোগ নিয়ে  রান্নার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এই গ্যাস সংযোগগুলো উপজেলা পরিষদের নামে নিবন্ধিত থাকলেও ব্যবহার করছেন তারা। ভাড়া না দিয়ে মাসের পর মাস বসবাস, ভাড়া ফাঁকি ও অবৈধ গ্যাস সংযোগ ব্যবহারের ফলে মাসে সরকার হারাচ্ছে লাখ লাখ টাকার রাজস্ব।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, বাঞ্ছারামপুর উপজেলা কমপ্লেক্স এলাকার সরকারি কোয়ার্টারগুলোতে উপজেলা পরিষদের অনেক কমর্কতা, কর্মচারী ও বহু বহিরাগত পরিবার দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছে। বসবাস করা এসব পরিবারের কারও নেই কোনো বৈধ কাগজপত্র কিংবা বাসা ভাড়া পরিশোধের প্রমাণ। তারা শুধু গ্যাসই নয়, বরং উপজেলা পরিষদের নামে থাকা বিদ্যুৎ মিটার ব্যবহার করে বিদ্যুৎ ব্যবহার করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। 
উপজেলা পরিষদ চত্বরের পূর্ব পাশে মিলনায়তনের পিছনে অফিসার্স কোয়ার্টারে দোতলা ভবনে বাস করছেন কিছু কর্মকর্তা ও কর্মচারী, নিচতলায় বসবাস করছেন উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা দুইজন, উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা, উপজেলা হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা, উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা, উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা, উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা, উপজেলা শিক্ষা প্রকৌশলী, দোতলার পশ্চিম পাশে বাস করছেন উপজেলা পরিষদের ঝাড়ুদার আসমা আক্তার, দোতলার পূর্বপাশে থাকছেন উপজেলা পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও হিসাব সহকারী দুইজন। 
উপজেলা পরিষদের পুকুর পাড়ের ঘাটলার উওর পাশের বিল্ডিংয়ে নিচ তলায় বসবাস করছেন উপজেলা পরিষদের মালি রফিকুল ইসলাম, উপর তলায় বসবাস করছেন বিআরডিবির দুইজন কর্মচারী, পিছনের দুইটা বিল্ডিং এর পূর্ব পাশের ভবনে দোতলার পূর্বপাশে থাকছেন মালি রফিকুল ইসলামের মেয়ে একটি বেসরকারি হাসপাতালে কর্মচারী, দোতলার পশ্চিমপাশে থাকছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একজন স্বাস্থ্য পরিদর্শক। নিচ তলায় পশ্চিম পাশে থাকছেন কৃষি অফিসের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা দুইজন, ঠিক পাশের ভবনের দোতলায় বাস করছেন উপজেলা  প্রকৌশলীর কার্যালয়ের কয়েকজন কমকর্তা ও কর্মচারী, নিজ তলায় থাকছেন কিছু বহিরাগত শ্রমিক। 
বিআরডিবি অফিসে কর্মরত মাঠকর্মী মিকাল হোসেন বলেন, আমি ও আমার এক সহকর্মী এখানে বসবাস করছি অনেকদিন ধরে, কোন ভাড়া দিতে হয় না, গ্যাসও ব্যবহার করছি গ্যাস বিলও কেউ আমাদের কাছে চায় না, আগে যারা ছিলেন তারা গ্যাস বিল ও ভাড়া দিয়েছেন, এখন আর ভাড়া ও গ্যাস বিল দিতে হয় না, আমাদের মত আরো অনেকেই এসব কোয়ার্টারে থাকছে।  
উপজেলা পরিষদের মালি রফিকুল ইসলাম জানান, আমি এই ভবনের নিচতলায় পরিবার নিয়ে থাকছি, উপরতলায়ও থাকছেন দুইজন। ভাড়া দিতে হয় না, গ্যাসও ব্যবহার করছি, কি করব। পাশের ভবনের একটাতে আমার মেয়েও থাকে। আমার মেয়ে একটা হাসপাতালে চাকরি করে। খালি আছে তাই সে থাকে, আরও অনেকেই আছে এইসকল কোয়ার্টারে থাকে, গ্যাসও ব্যবহার করছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের ঝাড়ুদার আসমা আক্তার জানান, আমি অফিসার কোয়ার্টারে দোতালায় থাকছি আমার কাছে কেউ ভাড়া চায় না। আমি গ্যাসও ব্যবহার করছি যদি ভাড়া ও গ্যাস এর টাকা চায় আমি দিব, তবে এখনও কেউ কিছু বলেনি। 
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা সুস্মিত ভৌমিক জানান, অফিসার্স কোয়ার্টারে আমি সহ আরও অনেকেই থাকছি। আমাদের এক সাথে রান্না হয় গ্যাসের চুলায়, মাসে যা খরচ হয় তা আমি দিয়ে দেই। আমার কাছ থেকে ভাড়া বাবদ টাকা নেওয়া হয় না।
উপজেলা প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, উপজেলা পরিষদের কোয়ার্টারগুলো পরিত্যক্ত ঘোষণা করার জন্য আমরা একটি প্রস্তাব কয়েকবছর আগে পাঠিয়েছিলাম। এই প্রস্তাব ফেরত পাঠিয়েছে আমাদের কাছে আরো কিছু তথ্য চেয়েছে, এই তথ্য দিয়ে আমরা আবার প্রস্তাবটা পাঠাবো, বর্তমানে যারা বাস করছে কারও নামেই বরাদ্দ নেই এই সকল ভবনে। অনেক ভবনের অবস্থা ভালো না তাই আমরা কাউকে বরাদ্দ দেই না। এখন যারা আছে তারা দখল করে আছে। 
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌস আরা বলেন, আমি শুনেছিলাম এইসব ভবনগুলি পরিত্যাক্ত। যদি এইসব ভবন পরিত্যাক্ত না হয়ে থাকে, তবে ইঞ্জিনিয়ার সাহেবের সাথে কথা বলে এই বিষয়ে ব্যবস্থা নিব। আর অবৈধ গ্যাস সংযোগের বিষয়ে জেলা থেকে অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্নতার জন্য কমিটি হয়েছে দ্রত সময়ের মধ্যে তারা অভিযান চালাবে। 

Side banner