রাজশাহীর হাট বাজারগুলোতে গোপালভোগের পর পাওয়া যাচ্ছে রানীপছন্দ ও লক্ষণভোগ আম। সুমিষ্ট এই আম কেনা-বেচায় জমে উঠেছে হাট বাজারগুলো। শুক্রবার (৩০ মে) সকালে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মধ্যে রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর হাটে আম কেনাবেচায় ধুম পরেছে। আম বিক্রেতারা বলছেন- আমের হাট বাজার জমে উঠেছে। আজ থেকে বাজারে পাওয়া যাবে হিমসাগর ও খিরসাপাত জাতের আম।
বানেশ্বর হাট সংশ্লিষ্টরা বলছেন- প্রতিদিন ভালোই বেচা বিক্রি হচ্ছে আম। তবে হাটটি রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়কে হওয়ায় স্থান পরিবর্তন করা হয়েছে। এখন থেকে আমের হাট বসবে বানেশ্বরের চারঘাট সড়কে। যানজট এড়াতে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।
সরেজমিনে জেলার সবচেয়ে বড় আম কেনাবেচার মোকাম বানেশ্বর হাটে গিয়ে দেখা যায়, গুটি জাতের আম বিক্রি হয়েছে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা মণ দরে। এছাড়া গোপালভোগ বিক্রি হয়েছে ১৪০০ থেকে ১৬০০ টাকা মণ দরে। লক্ষণভোগ বিক্রি হয়েছে ৫০০ থেকে ৭৫০ টাকা মণ, রাণীপছন্দ ৭০০ থেকে ১ হাজার টাকা মণ দরে।
তবে প্রশাসনের বেঁধে দেওয়া ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ল্যাংড়া, হিমসাগর আম পাড়ার সময় না হলেও বানেশ্বর হাটে কেনাবেচা হয়েছে এই দুই জাতের আম। হাটে প্রতি মণ ল্যাংড়া আম কেনা বেচা হয়েছে ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকায়। আর হিমসাগর বিক্রি হয়েছে ১২০০ থেকে ১৭০০ টাকা মণ দরে। যদিও হিমসাগর আম গত তিনদিন আগেও বিক্রি হয়েছে ১৬০০ থেকে ২২০০ টাকা দরে। তবে কিছুটা কমেছে এই আমের দাম।
হাট সংশ্লিষ্টরা বলছেন- সারাদেশ থেকে ব্যবসায়ীরা বানেশ্বর হাটে আছেন আম কিনতে। এই হাটে ব্যবসায়ীরা সরাসরি বাগান থেকে পছন্দমত আম কিনতে পারেন। আম কিনে তারা নিজেদের স্থানীয় হাটে বিক্রি করে থাকেন। রাজশাহীর আমের সুনাম থাকায় সারা দেশে চাহিদাও ব্যাপক।
আম বিক্রেতা সফিকুল ইসলাম বলেন, গুটি জাতের আম হাটে কমে আসছে। হাটে গুটি জাতের আম বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা মণ দরে। গোপালভোগ ১৪০০ থেকে ১৬০০ টাকা মণ ও লক্ষণভোগ বিক্রি হয়েছে ৫০০ থেকে ৭৫০ টাকা মণ এবং রাণীপছন্দ ৭০০ থেকে ১ হাজার টাকা মণ দরে। আমের দাম কমে গেছে। ইদের পরে আবার বাড়তে পারে আমের দাম।
ঢাকার আম ব্যবসায়ী ফারুক হোসেন দাবি করেন- গত বছরের চেয়ে এবার আমের তুলনামূলক দাম কম। তার ধারণা আসন্ন ঈদকে কেন্দ্র করে অনেকেই দেশের বাড়িতে ফিরে যাবেন। তাই অনেকেই বেশি করে আম কিনছেন না। মাত্র কয়েকদিন খাওয়ার জন্য কিনছে আম। তবে ইদের ছুটি শেষে মানুষ কর্মময় জীবনে ফিরবে। সেই সময় বাড়তে পারে আমের দাম। এবার আমের আকার ও রঙ ভালো।
এ বিষয়ে বানেশ্বর হাটের ইজারাদার জাকির হোসেন সরকার রাসেল বলেন, আমের বাজার জমে উঠেছে। প্রতিদিন দূরদূরান্ত থেকে আসা ক্রেতা-বিক্রেতায় মুখর হয়ে থাকছে বানেশ্বরের আমের হাট। আমদানি বেশি হওয়ায় আমের বাজার এখন একটু কম।
অপরদিকে বৃহস্পতিবার (২৯ মে) উপজেলার মাসিক ও আইনশৃঙ্খলা মিটিংয়ে বানেশ্বর আমের হাট স্থানান্তরের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সড়কে যানজট নিরসনে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। হাটটি শুক্রবার থেকে বানেশ্বর ট্রাফিক মোড় থেকে দক্ষিণে চারঘাট রোডে বসে।
জানা গেছে, বানেশ্বর আমের হাট বসে রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়কের পাশে। সড়কের ওপরে সারি সারি আমের গাড়িতে পসরা সাজিয়ে আম বিক্রি করেন মালিকরা। এতে এক প্রকারের যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে দুর্ভোগে পড়ে যানবাহনের যাত্রীরা। এতে করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। সড়কে এমন বিড়ম্বনা এড়াতে আমের হাট হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়ে উপজেলা প্রশাসন।
আমের হাটের স্থান পরিবর্তনের বিষয়ে বানেশ্বর হাটের ইজারাদার জাকির হোসেন সরকার রাসেল বলেন, আমের হাটের কারণে হাইওয়ে রোডে যানজটের সৃষ্টি হয়। যানজটের কারণে আমের হাটের স্থান পরিবর্তন করা হয়েছে।
এ বিষয়ে পুঠিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) একেএম নুর হোসেন নির্ঝর বলেন, বানেশ্বরে আমের হাটের কারণে সড়কে যানজট হচ্ছে। এই যানজটের কারণে দুর্ভোগে পড়ছে মানুষ। সেই কারণে আমের হাটটি রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়ক থেকে সরিয়ে বানেশ্বরের চারঘাট সড়কে নেওয়া সিদ্ধান্ত হয়েছে। আজ থেকে আমের হাট বসে চারঘাট সড়কে। এর ফলে হাইওয়ে সড়কে কমবে যানজট।
আপনার মতামত লিখুন : :