• ঢাকা
  • বুধবার, ২৫ জুন, ২০২৫, ১১ আষাঢ় ১৪৩২
Bancharampur Barta
Bongosoft Ltd.

উচ্ছিষ্ট বর্জ্য থেকে মাছের খাবার তৈরি, মাসে আয় ৬০ হাজার টাকা


বাঞ্ছারামপুর বার্তা | নওগাঁ প্রতিনিধি জুন ২৫, ২০২৫, ০২:২৪ পিএম উচ্ছিষ্ট বর্জ্য থেকে মাছের খাবার তৈরি, মাসে আয় ৬০ হাজার টাকা

ইউটিউবে ভিডিও দেখে নওগাঁয় কালো সৈনিক পোকা বা ব্ল্যাক সোলারসহ ফ্লাই নামের একটি পোকা থেকে লার্ভা উৎপাদন করে  সাফল্য পেয়েছেন আহসান হাবিব নামে উদ্যোক্তা। এ পোকার লার্ভা মাছের বিকল্প খাবার হিসেবে ব্যবহারের পাশাপাশি বিক্রি করে প্রতি মাসে আয় করছেন ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা। মাছের খাবারের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার হওয়ায় এই পোকা চাষে আগ্রহ বাড়ছে স্থানীয়দের। উদ্যোক্তা আহসান হাবিব সদর উপজেলার তিলেক পুর ইউনিয়নের প্রত্যন্ত উলিপুর গ্রামের বাসিন্দা।
জানা যায়, আহসান হাবিব পেশায় একজন কৃষক। কৃষি কাজের পাশাপাশি তিনি পুকুরে মাছ চাষ করতেন। বাজারে যখন মাছের খাবারের মূল্যে বৃদ্ধি তখন খরচ কমাতে বিকল্প পথ খুঁজতে থাকেন। একপর্যায়ে ২০১৯ সালে ইউটিউব ভিডিও দেখে কালো সৈনিক পোকা বা ব্ল্যাক সোলজার চাষের আগ্রহ হয়। পরিকল্পনা করেন এই পোকা চাষের। ২০২৪ সালে খামার সম্প্রসারণে পিকেএসএফ এর কারিগরি সহযোগিতায় মৌসুমি আরএম টিপি প্রকল্প তাকে সহায়তা দেন। এরপর কালো সৈনিক পোকা বা ব্ল্যাক সোলজারস ফ্লাই বাণিজ্যিকভাবে চাষ করে সাফল্য পান। মাসে এখন তার খামারে ২৫০ থেকে ২৬০ কেজি লার্ভা উৎপাদন হয়। নিজের পুকুরে মাছের খাবার হিসেবে ব্যবহারের পাশাপাশি বিক্রি করে থাকেন। এলাকায় তিনি পোকা চাষি হাবিব নামে পরিচিত।
কালো সৈনিক পোকা বা ব্ল্যাক সোলজারস ফ্লাই মূল পোকাগুলো একটি জালের মধ্যে, দিনের বেলায় আলো-বাতাস আসে এমন জায়গায় রাখা হয়। পোকাগুলো প্রজনন সম্পন্ন করার পর সেখানে কাঠের স্তরের মধ্যে ডিম পাড়ে। সেই ডিমগুলো হ্যাচিং করে ফোটানোর কিছুদিন পর আলাদা করে অন্য জায়গায় রাখা হয়। এরপর সেখান থেকে তৈরি হয় লার্ভা। এসব লার্ভা উৎপাদন কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে বাসা বাড়ি, হোটেল-রেস্তোরাঁ উচ্ছিষ্ট খাবার, পচনশীল ফলমূল অথবা শাকসবজি। এসব পচনশীল আবর্জনা সংরক্ষণ করে সেটির প্রক্রিয়াজাত করা হয়। তারপরও সেখানে জন্ম নয় এসব লার্ভা। এসব পোকা মাছের জন্য প্রোটিন সমৃদ্ধ একটি খাবার। ব্যাপক প্রোটিনসমৃদ্ধ হওয়ায় মাছের বিকল্প খাবার হিসেবে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এটি ব্যবহারে যেমন উৎপাদন বাড়বে তেমন কমবে খরচে উৎপাদনে। শুধু লার্ভা উৎপাদনে নয় আবর্জনা ব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে দূষণ কমাতে সহায়ক ভূমিকা রাখছে এমন উদ্যোগ।
উদ্যোক্তা আহসান হাবিব বলেন, ইউটিউবে ভিডিও দেখার পর প্রথমে তিনি সিলেট থেকে সৈনিক পোকা বা ব্ল্যাক সোলজারস ফ্লাই এর পিউপা সংগ্রহ করে ছোট পরিসরে এর চাষ শুরু করেন। তারপর তিনি নিজের পুকুরে মাছের খাবার হিসেবে ব্যবহার কম খরচে লাভবান হন। পরে বাণিজ্যিকভাবে চাষ শুরু করেন কালো সৈনিক পোকা বা ব্ল্যাক সোলজারস ফ্লাইয়ের। পোকা চাষের কারণে স্থানীয়রা একসময় আমাকে পাগল ভাবত। কিন্তু এখন অনেকেই এখন তার কাছে এসে পরামর্শ চান এই পোকা চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে।
তিনি আরও বলেন, এসব পোকা মাছের জন্য প্রোটিন সমৃদ্ধ একটি খাবার। প্রোটিনের পরিমাণ থাকে ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত। বাজারে পাওয়া মাছের খাবারের প্যাকেটে ৩২ শতাংশ প্রোটিন লেখা থাকলেও বাস্তবে তা পাওয়া সম্ভব না। এই খাবার খাইয়ে মাছ চাষ করলে বাজারে পাওয়া মাছের খাবারের চেয়ে খরচ কম হয়। তাই এ পোকার চাহিদাও বেশি। ৫০০টা কেজি হিসেবে বিক্রি হয়ে থাকে। ভবিষ্যতে এর লার্ভা পাউডার করে বাজারজাত করার কথা জানান এই উদ্যোক্তা। এছাড়াও কোন মাছ চাষি নিজেই ব্ল্যাক সোলজারস ফ্লাই চাষ করলে কম খরচে খাবার তৈরি করে লাভবান হতে পারবে বলে মনে করেন এই খামারি।
স্থানীয় মাছ চাষি রফিকুল ও রাজা বলেন, আমাদের নিজেদেরই পুকুর আছে। বাজার থেকে খাবার কিনে মাছে চাষে খরচ বেশি হয়। লাভবান হওয়া যায় না। কিন্তু কম খরচে উচ্ছিষ্ট খাবার থেকে কালো সৈনিক পোকা বা ব্ল্যাক সোলজারস থেকে লার্ভ তৈরি করে মাছের খাবার হিসেবে ব্যবহার করলে লাভবান হওয়া যাবে। চিন্তাভাবনা করেছি আহসান হাবিরের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে এরকম একটি উদ্যোগ নেব।
মৌসুমি আরএমটিপি প্রকল্পের মনিটরিং কর্মকর্তা আব্দুর রউফ পাভেল বলেন, উন্নয়ন সংস্থা মৌসুমীর মাধ্যমে জেলায় এই প্রথম আগ্রহী মাছ চাষিদের মাধ্যমে কালো সৈনিক পোকা চাষের প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। চাষিদের মাছ চাষে অধিক লাভবান করতে ও ভোক্তাদের মাঝে বিষমুক্ত মাছ পৌঁছে দিতেই এমন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। আগামীতে এই প্রকল্পটি আরও বিভিন্ন উপজেলায় ছড়িয়ে দেওয়া হবে।
নওগাঁ সদর উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা ড. মো. বায়েজিদ আলম বলেন, শতভাগ পরিবেশ বান্ধব এই কালো সৈনিক পোকার অনেক উপকারী দিক রয়েছে। এই পোকার খাবার হচ্ছে ফেলে দেওয়া বাড়ির উচ্ছিষ্ট, ময়লা আর আবর্জনা। ফেলে দেওয়া এই ডাস্টগুলো রিসাইকেল হতে যে ক্ষতিকর গ্রিন হাউজ গ্যাস নি:সরণ ঘটে সেই গ্যাসও এই পোকা শোষণ করে। মাছ চাষি ও ভোক্তাদের মাঝে এই পোকার উপকারী দিক সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। বেসরকারি সংস্থার পাশাপাশি সরকারিভাবেও এই পোকা চাষের উপর প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। তবে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় গবেষণার মাধ্যমে ফিডের মতো করে এই পোকার পাউডার তৈরি করে বাজারজাত করতে পারলে চাষিদের মাছ চাষে খরচ কমার পাশাপাশি দেশের ভোক্তাদের কাছে বিষমুক্ত মাছ পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হতো। এছাড়াও আবর্জনা ব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে দূষণ কমাতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।

Side banner