• ঢাকা
  • বুধবার, ০৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১৯ ভাদ্র ১৪৩২
Bancharampur Barta
Bongosoft Ltd.

ন্যায় বিচারে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত বাঞ্ছারামপুরের গর্বিত সন্তানেরা


বাঞ্ছারামপুর বার্তা | মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান পামেন সেপ্টেম্বর ৩, ২০২৫, ০৬:২৯ পিএম ন্যায় বিচারে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত বাঞ্ছারামপুরের গর্বিত সন্তানেরা

তিতাস বিধৌত শিল্প সাহিত্য ও সংস্কৃতির অন্যতম পাদপীঠ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলার প্রমত্তা মেঘনার কোলঘেষা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপূর্ব লীলাভূমি বাঞ্ছারামপুর। এই বাঞ্ছারামপুরে দেশবরেণ্য অগণিত কৃতি সন্তানের জন্ম হয়েছে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সচিব থেকে শুরু করে শিক্ষাবিদ, কৃষিবিদ, প্রত্নতত্ত্ববিদ, ইতিহাসবিদ, ক্রীড়াবিদ, রাজনীতিবিদ, কবি, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক ব্যবসায়ী সহ নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত অনেক গুণীজন তথা কৃতি সন্তানের জন্ম হয়েছে। যারা সমাজ, দেশ ও রাষ্ট্রের উন্নয়ন এবং অগ্রগতিতে অনেক কাজ করেছেন। একই সাথে বাঞ্ছারামপুরের সার্বিক কল্যাণে ছিলেন নিবেদিতপ্রাণ। ইতোমধ্যে এদের অনেকে মৃত্যুবরণ করেছেন, অনেক সম্প্রতি অবসরগ্রহণ করেছেন আবার অনেকে নিজেদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। 
অন্যান্য সেক্টরের মতো দেশের আইন ও বিচার বিভাগে বাঞ্ছারামপুরের অনেক কৃতি সন্তান কর্মরত রয়েছেন। এদের মধ্যে উপজেলার সোনারামপুর ইউনিয়নের কানাইনগর গ্রামের মুর্শিদ আহাম্মেদ, মরিচাকান্দির আল-মামুন, বাহাদুরপুরের আবদুল মোমেন, পাড়াতলির মোহাম্মদ শেখ সাদী, ছয়ফুল্লাকান্দির মিথিলা জাহান নীপা ও ফরদাবাদের শফি উদ্দিন অন্যতম।
বাঞ্ছারামপুর উপজেলার এসব কৃতি সন্তানেরা অত্যন্ত সততা, দক্ষতা, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সাথে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। বিশেষ করে নিজেদের মেধা মনন ও প্রজ্ঞায় আল-মামুন, মুর্শিদ আহাম্মেদ, আবদুল মোমেন অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। অন্যরাও বেশ এগিয়ে যাচ্ছেন। 
অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ বাংলাদেশের জেলায় অবস্থিত জজ কোর্টের বিচারক যিনি দেওয়ানি ও ফৌজদারি উভয় এখতিয়ার প্রয়োগ করেন। তিনি জেলা ও দায়রা জজের সমপর্যায়ের বিচারিক ক্ষমতার অধিকারী। বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিসের গ্রেড-২ এর কর্মকর্তাগণের মধ্য হতে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ নিয়োগ দেওয়া হয়। তিনি জেলা ও দায়রা জজের ডেপুটি হিসেবে তার অবর্তমানে তার কার্যভার পালন করে থাকেন।
বাংলাদেশের সংবিধান এর ১১৫ ও ১৩৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ নিয়োগ দিয়ে থাকেন। আইন মন্ত্রণালয় সুপ্রীম কোর্টের সাথে পরামর্শক্রমে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজদের পদায়ন ও বদলি করে থাকে।
অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ যখন ফৌজদারি এখতিয়ার প্রয়োগ করেন তখন তিনি অতিরিক্ত দায়রা জজ এবং যখন দেওয়ানি এখতিয়ার প্রয়োগ করেন তখন তিনি অতিরিক্ত জেলা জজ হিসেবে অভিহিত হন। 
ফৌজদারি এখতিয়ার: অতিরিক্ত দায়রা জজ মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবন কারাদণ্ড সহ আইনে উল্লেখিত সকল প্রকারের দন্ড প্রদান করতে পারেন।
দেওয়ানি এখতিয়ার: অতিরিক্ত জেলা জজের রিভিশন এখতিয়ার হচ্ছে দেওয়ানী বিষয়বস্তুর আপীল যার মূল্যমান সর্বোচ্চ ৫ কোটি টাকা।
বাংলাদেশের পদমর্যাদা ক্রম অনুযায়ী অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজের পদমর্যাদার ক্রম ১৭।
মুর্শিদ আহাম্মেদ
বাঞ্ছারামপুর উপজেলার সোনারামপুর ইউনিয়নের কানাইনগর গ্রামের সন্তান মুর্শিদ আহাম্মেদ। তার পিতা গোলাম সাদেক এবং মাতা আফিয়া বেগম। তিনি ১৯৯৬ সালে মরিচাকান্দি ডিটি একাডেমী থেকে এসএসসি, ১৯৯৮ সালে অধ্যাপক আবদুল মজিদ কলেজ থেকে কৃতিত্বের সাথে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ হতে ২০০৩ সালে অনার্স এবং ২০০৪ সালে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন।
মুর্শিদ আহমেদ ২০০৮ সালে সহকারী জজ হিসেবে কর্ম জীবন শুরু করেন। বর্তমানে তিনি আইন কর্মকর্তা (অতিরিক্ত জেলা জজ) হিসেবে প্রেষণে পুলিশ হেডকোয়ার্টার, ঢাকায় কর্মরত রয়েছেন। রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি এলাকার সামাজিক উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে তিনি নিবেদিতপ্রাণ। এলাকায় একজন নম্র ভদ্র ও বিনয়ী মানুষ হিসেবে পরিচিত মুর্শিদ আহাম্মেদ। অবসরে তিনি বই পড়ে সময় কাটান। 
আল-মামুন
বাঞ্ছারামপুর উপজেলার মরিচাকান্দি গ্রামের সন্তান আল-মামুন। তার পিতা হোসেন মিয়া এবং মাতা রহিছা খাতুন। তিনি ১৯৯৭ সালে মরিচাকান্দি ডি টি একাডেমি থেকে এসএসসি, ১৯৯৯ সালে অধ্যাপক আবদুল মজিদ কলেজ থেকে কৃতিত্বের সাথে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। আল-মামুন কর্মময় জীবনে একজন বিচারক। বর্তমানে তিনি অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে নরসিংদী জেলায় কর্মরত আছেন। রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি এলাকার সামাজিক উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে তিনি নিবেদিতপ্রাণ।
আবদুল মোমেন
বাঞ্ছারামপুর উপজেলার দরিকান্দি ইউনিয়নের বাহাদুরপুর গ্রামের কৃতি সন্তান আবদুল মোমেন। তার পিতা মরহুম আবুল হাশিম এবং মাতা মরহুমা মোসা. আনোয়ারা বেগম। তিনি ১৯৯৬ সালে শাহ রাহাত আলী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে (স্টার মার্ক) এসএসসি এবং ১৯৯৯ সালে শ্রীকাইল কলেজ থেকে (বাণিজ্য বিভাগে কুমিল্লা বোর্ডে ৭ম স্থান) এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি এলএলএম সম্পন্ন করেন। 
আবদুল মোমেন কর্মময় জীবনের শুরুতে কিশোরগঞ্জ জেলায় সহকারী জজ হিসেবে যোগদান করেন। তারপর পাবনা ও সিলেট জেলায়। বর্তমানে তিনি নারায়ণগঞ্জে যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। 
একজন সামাজিক ও মানবিক মানুষ হিসেবে পরিচিত আবদুল মোমেন। এলাকার শিক্ষার উন্নয়নে তিনি নিবেদিতপ্রাণ। মানবপ্রেম ও দেশপ্রেমকেই জীবনের ব্রত হিসেবে দেখছেন। মানুষ ও মানবতার কল্যাণে নিজেকে নিজেকে সম্পৃক্ত করেছেন বাঞ্ছারামপুরের গর্বিত সন্তান আবদুল মোমেন। 
মিথিলা জাহান নীপা
বাঞ্ছারামপুর উপজেলার ছয়ফুল্লাকান্দি গ্রামের সন্তান মিথিলা জাহান নীপা। তার পিতা মোহাম্মদ শাহজাহান এবং মাতা রেজিয়া বেগম। তিনি ২০০২ সালে শাহ রাহাত আলী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ২০০৪ সালে অধ্যাপক আব্দুল মজিদ কলেজ থেকে কৃতিত্বের সাথে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিভাগে অনার্স মাস্টার্স সম্পন্ন করেন।
মিথিলা জাহান নীপা কর্মময় জীবনে সহকারী জজ হিসাবে কুমিল্লা জজ কোর্টে যোগদান করেন। বর্তমানে যুগ্ম জেলা জজ হিসাবে নেত্রকোণায় কর্মরত রয়েছেন। তার স্বামী প্রশাসন ক্যাডারের উপসচিব হিসাবে নেত্রকোণা জেলায় কর্মরত আছেন।
শফি উদ্দিন 
বাঞ্ছারামপুর উপজেলার ফরদাবাদ গ্রামের সন্তান শফি উদ্দিন। তার পিতা বীর মুক্তিযোদ্ধা নুর উদ্দিন আহমেদ এবং মাতা হালিমা খাতুন। তিনি ২০০২ সালে অন্নদা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ২০০৪ সালে ঢাকা সিটি কলেজ থেকে কৃতিত্বের সাথে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পরে নর্দান বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ থেকে আইন বিষয়ে এলএলবি (অনার্স) ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় হতে এলএলএম (মাস্টার্স) সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে ক্রিমিনোলজি এন্ড ক্রিমিনাল জাস্টিস ও অধিকতর মাস্টার্স সম্পন্ন করেন।
শফি উদ্দিন কর্মময় জীবনে সহকারী জজ হিসাব কিশোরগঞ্জ, সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হিসাবে কক্সবাজার ও মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হিসাবে চট্টগ্রাম সিএমএম কোর্টে ও ঢাকা সিএমএম কোর্টে কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে তিনি যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ হিসাবে শরীয়তপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতে কর্মরত রয়েছেন। রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি এলাকার সামাজিক উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে তিনি নিবেদিতপ্রাণ।
মোহাম্মদ শেখ সাদী
বাঞ্ছারামপুর উপজেলার পাড়াতলি গ্রামের সন্তান মোহাম্মদ শেখ সাদী। তার পিতা মোহাম্মদ আলী এবং মাতা সাজেদা খাতুন। তিনি ২০০৪ সালে শাহ রাহাত আলী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ২০০৬ সালে শাহ রাহাত আলী কলেজ কলেজ থেকে কৃতিত্বের সাথে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে এলএলবি (অনার্স) ও এলএলএম (মাস্টার্স) সম্পন্ন করেন। 
মোহাম্মদ শেখ সাদী কর্মময় জীবনে সহকারী জজ হিসাব জয়পুরহাটে, সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হিসাবে নরসিংদীতে ও মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হিসাবে ঢাকা সিএমএম কোর্টে কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে তিনি সিনিয়র সহকারী জজ হিসাবে কিশোরগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে কর্মরত রয়েছেন। রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি এলাকার সামাজিক উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে তিনি নিবেদিতপ্রাণ।

Side banner