• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর, ২০২৫, ১৫ কার্তিক ১৪৩২
Bancharampur Barta
Bongosoft Ltd.

১২ হাজার শিশুর জন্মে সহায়তা বাঞ্ছারামপুরের সবার প্রিয় ‘ফজিলত আপা’


বাঞ্ছারামপুর বার্তা | ফয়সল আহমেদ খান অক্টোবর ২৬, ২০২৫, ০১:৩৭ পিএম ১২ হাজার শিশুর জন্মে সহায়তা বাঞ্ছারামপুরের সবার প্রিয় ‘ফজিলত আপা’

যখন একটি শিশু জন্ম নেয়, তখন প্রয়োজন হয় অভিজ্ঞ ধাত্রীর কোমল হাতে মমতার ছোঁয়া। এমনই এক নিবেদিতপ্রাণ ধাত্রী হলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার পরিকল্পনা ও স্বাস্থ্য সহকারী ফজিলাতুন্নেছা বেগম। সবার কাছে তিনি ‘ফজিলত আপা’ নামে পরিচিত।
১৯৮৮ সালে সরকারি চাকরিতে যোগ দিয়ে শুরু করেন ধাত্রীবিদ্যার প্রশিক্ষণ। এরপর থেকে চার দশকের কর্মজীবনে তিনি সহায়তা করেছেন প্রায় ১২ হাজার শিশুর স্বাভাবিক প্রসবে যা তাঁর সহকর্মীদের মতে দেশের অন্যতম রেকর্ড।
ফজিলাতুন্নেছা বেগমের জন্ম বাঞ্ছারামপুরের আইয়ুবপুর ইউনিয়নে। বিয়ে হয় বাহেরচর গ্রামে। স্বামী যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী, একমাত্র ছেলে আজিজুল হক খোকা ব্যবসায়ী এবং এফবিসিসিআইয়ের সাধারণ সদস্য।
ধাত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি তিনি গর্ভবতী মায়েদের নিয়মিত পরামর্শ দেন।
ফজিলত আপা বলেন, ‘যখন কেউ গর্ভবতী হন, তখন থেকেই আমি বিনা খরচে নিয়মিত পরামর্শ দিই, কী খাবেন, কীভাবে যত্ন নেবেন, এসব বিষয়ে বোঝাই। আমি নিজে ঘরে ঘরে গিয়ে খোঁজ নিই। নরমাল ডেলিভারি নিয়ে মায়েরা ভয় পান, তাই তাদের সাহস দিই।’
তিনি বলেন, ‘বৃষ্টি-ঝড়ের রাতে বিদ্যুৎহীন গ্রাম্য পথে হ্যারিকেন হাতে হেঁটে বা নৌকায় করে প্রসববেদনায় থাকা নারীর পাশে গেছি। এমনও হয়েছে খবর পেয়েই খাওয়া-দাওয়া বাদ দিয়ে ছুটে গেছি, যেন শিশুটি নিরাপদে জন্ম নিতে পারে।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিভিল সার্জন ডা. নোমান মিয়া বলেন, ‘আমার কর্মজীবনে ফজিলাতুন্নেছার মতো নিবেদিত ও দক্ষ ধাত্রী পাওয়া গৌরবের। তাঁর নাম চিরভাস্বর হয়ে থাকবে।’
আইয়ুবপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য পরিদর্শক আবুল হাসান জানান, ‘এই অঞ্চলে গর্ভবতী নারীদের কাছে সবচেয়ে প্রিয় নাম ফজিলত আপা। সবাই তাঁকে নরমাল ডেলিভারির জন্য খোঁজেন।’
নিজের জীবনের শ্রেষ্ঠ প্রাপ্তি জানতে চাইলে ফজিলত আপা বলেন, ‘যখন দেখি কোনো মা-বাবা বা পরিবার নবজাতকের লিঙ্গ না দেখে আনন্দে তাকে বরণ করছেন তখন মনে হয়, আমার জীবন সার্থক। আর কষ্ট পাই যখন কোনো মা মৃত সন্তান প্রসব করে।’
অসামান্য এই অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ফজিলাতুন্নেছা বেগমকে তিনবার ‘সেরা মাঠকর্মী’ হিসেবে পুরস্কৃত করেছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়।
নিঃস্বার্থ সেবা, সাহস আর মানবিকতার মিশেলে বাঞ্ছারামপুরের এই ‘ফজিলত আপা’ আজ হাজারো মায়ের মুখে আশার নাম যিনি কোমল হাতে ১২ হাজার শিশুকে পৃথিবীর আলো দেখিয়েছেন।

Side banner