ঢাকাই সিনেমার অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেতা জাম্বু, যার নামটি আজও ছোট বড় সবার কাছে বহুল পরিচিত। সত্তর, আশি এবং নব্বইয়ের দশকের দর্শকদের কাছে তিনি শুধু পরিচিতই নন, এক অদ্ভুত চেহারার জন্যও স্মরণীয়। শুধুমাত্র তাঁর মুখাবয়বের অভিব্যক্তি দিয়েই তিনি দর্শকের মধ্যে ভয় এবং শঙ্কা সৃষ্টি করতে পারতেন।
জাম্বু প্রথমে এফডিসিতে বাবুল গোমেজ নামেই যোগ দেন। তাঁর আসল নাম ছিল সুখলাল বাবু। তিনি ১৯৪৪ সালে জন্মগ্রহণ করেন। চলচ্চিত্র পরিচালক দেলোয়ার জাহান ঝণ্টুর এক সাক্ষাৎকারে জানা যায়, ১৯৭২ সালের ঘটনা। আমি তখন পপুলার স্টুডিওতে লিডার সিনেমার শুটিং করছিলাম। পপুলার স্টুডিওটা নারায়ণগঞ্জ যাওয়ার আগে। এটা বাংলাদেশের প্রথম পরিচালক আব্দুল জব্বার খানের স্টুডিও ছিল। শুটিং চলাকালীন দেখি একটা ছেলে আসছে লম্বা চওড়া। জিজ্ঞেস করলাম নাম কী? বললো, বাবুলাল। জিজ্ঞেস করলাম অভিনয় করবে? সে বলল, হ্যাঁ করবে। আমি তখন বলি শর্ত রয়েছে একটা।
সেই শর্ত প্রসঙ্গে ঝন্টু বলেন, সদ্য মুক্তিযুদ্ধ শেষ হওয়া দেশের সংস্কৃত পুননির্মাণ কাজে ব্যস্ত। হয়তো সে দৃশ্য আরও চোখের সামনে এনে পরিষ্কারভাবে দেখতে চাইলেন। বললেন, ‘আসলে মারপিটের একটা দৃশ্য আছে। বিপরীত দলে বাবুলালের মতো একটা ছেলে থাকলে ভালো হয়। আমি ওকে শর্ত দিলাম মাথা ন্যাড়া করে অভিনয় করতে হবে। সে বলল তাই করবে। এরপর মাথা ন্যাড়া করে দিলাম। সত্যি তাকে এবার বড়সড় একজন মাস্তান লাগছিল। আমি ওর নাম দিলাম ‘জাম্বু’।
কেন জাম্বু? ঝণ্টু বলেন, বড় বিমানকে ‘জাম্বো জেট’ বলা হয়, আর বাবুলালও ছিল বেশ বড়সড়, তাই নামটি দেওয়া হলো জাম্বু। এই নামটি পরে চলচ্চিত্র জগতে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
জাম্বু তাঁর দীর্ঘ ক্যারিয়ারে বহু সিনেমায় অভিনয় করেছেন। বিশেষত ঐতিহাসিক চলচ্চিত্র “রঙিন নবাব সিরাজউদ্দৌলা”তে মোহাম্মদী বেগ চরিত্রে তিনি অসাধারণ ছিলেন। সাহিত্যভিত্তিক “রাজলক্ষী শ্রীকান্ত” সিনেমায় অর্জুন সিং চরিত্রেও তিনি ব্যাপক প্রশংসা পান। এছাড়া, “হিরো”, “রকি”, “মোহাম্মদ আলী” এবং “রাস্তার রাজা”-এর মতো সিনেমাগুলোতে তাঁর শক্তিশালী চরিত্রে অভিনয় দর্শকদের মন জয় করে।
তাঁর অভিনীত উল্লেখযোগ্য সিনেমাগুলোর মধ্যে রয়েছে সাগর ভাসা, এক মুঠো ভাত, রক্তের দাগ, শীষনাগ, হাসান তারেক, নির্দোষ, নবাব, রাস্তা, রকি, আত্মরক্ষা, বিজলী তুফান, মাটির ফুল, পালকি, হিরো, রাজাবাবু, শিকার, শত্রু ধ্বংস, অঙ্গার, যোদ্ধা, অভিযান, অমর, মৃত্যুদণ্ড সহ আরও অনেক।
জাম্বু তাঁর শক্তিশালী অভিনয় দক্ষতার জন্য আজও অতিপরিচিত। ব্যক্তিগত জীবনে তাঁর দুই ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে। তাঁর বড় ছেলে ডায়মন্ড বর্তমানে একটি ব্যাংকে চাকরি করেন, আর ছোট ছেলে সাম্বু সিনেমায় অভিনয় করার পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যাত্রায় অভিনয় করেন। সাম্বু, তার বাবার পরিচিতির কারণে ভক্তদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়।
আজ শক্তিশালী অভিনেতা জাম্বুর মৃত্যুবার্ষিকী। ২০০৪ সালের ৩ মে, আজকের এই দিনে চিরতরে বিদায় নেন এই সুপরিচিত খল অভিনেতা জাম্বু।
আপনার মতামত লিখুন : :