• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৭ জুন, ২০২৫, ১৩ আষাঢ় ১৪৩২
Bancharampur Barta
Bongosoft Ltd.

বাঞ্ছারামপুরে উদ্যোক্তার বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ 


বাঞ্ছারামপুর বার্তা | স্টাফ রিপোর্টার জুন ২৭, ২০২৫, ০৩:২৬ পিএম বাঞ্ছারামপুরে উদ্যোক্তার বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ 

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরের ১৩টি ইউনিয়ন পরিষদের বেশ কয়েকজন উদ্যোক্তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। সর্বশেষ মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর কর্তৃক বাস্তবায়িত ভিডব্লিউবি কর্মসূচির আওতায় “স্বনির্ভরতার জন্য সহায়তা” প্রকল্পের ১৭শত মহিলার কাছ থেকে প্রায় ৫ লাখ ১০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বিগত সময়ে সঠিক জবাবদিহিতা ও কার্যকর কোন পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় চিহ্নিত উদ্যোক্তাদের অনেকেই ধরাকে সরাজ্ঞান করছেন। বিশেষ করে ৫ আগস্টের পর ইউপি চেয়ারম্যানদের অনেকে আত্মগোপনে চলে যাওয়ায় উদ্যোক্তাদের অনেকেই বেপরোয়া হয়ে গেছে। নানাভাবে সাধারণ মানুষ তাদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। 
নানা অভিযোগে জানা যায়, মাতৃত্বকালীন ভাতার নির্ধারিত সরকারি ফি ৪৫ টাকা থাকলেও ইউডিসি’র উদ্যোক্তাদের অনেকেই আবেদন করার জন্য দরিদ্র মায়েদের থেকে ৫-৭শত টাকা নিয়ে থাকেন। মুজিব বর্ষের ঘর দেয়ার নামে ৩-৫শত টাকা আবেদনের নামে নিয়েছেন। ওয়ারিশ সনদ প্রদানের জন্য প্রতিটি সনদে ৫-৭শত টাকা আদায় করে পেইড লেখা স্লিপের মাধ্যমে যা ইউনিয়ন পরিষদের ক্যাশ বই কিংবা ব্যাংক হিসাবে জমা করার জন্য ইউপি সচিবের কাছে হিসাব প্রদান করার কথা থাকলেও অনেকে করেন না। গ্রাম আদালত মামলার জন্য প্রতিটি মামলার ফি বাবদ ৫শত টাকা করে গ্রহণ করার অভিযোগও রয়েছে। 
এছাড়াও বাঞ্ছারামপুর উপজেলার বেশ কয়েকজন উদ্যোক্তার নামে অভিযোগ রয়েছে, গ্রাম আদালত মামলা, জন্ম নিবন্ধন, ট্রেড লাইসেন্স, ওয়ারিশ সনদ, মাতৃত্বকালীন ভাতা, বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা ও ভিজিডি আবেদন সহ সকল রকমের সরকারি ভাতা আবেদন কিংবা প্রত্যায়ন উদ্যোক্তার মাধ্যমে করাতে বাধ্য করা হয়। 
আবেদনকারী নিজে অথবা উদ্যোক্তা ব্যতীত সেন্টারের বাইরে কোন কম্পিউটার দ্বারা আবেদন করালে সেই আবেদন ইউনিয়ন পরিষদে গ্রহণ করা হয় না। জনসাধারণকে জিম্মি করে অতিরিক্ত টাকা আদায় করার জন্য এমন পদ্ধতি ব্যবহার করে থাকেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার হচ্ছে ইউনিয়ন পরিষদে স্থাপিত তথ্য-প্রযুক্তিনির্ভর একটি অত্যাধুনিক তথ্য ও জ্ঞানকেন্দ্র (টেলিসেন্টার) যার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো তৃণমূল মানুষের দোরগোড়ায় তথ্যসেবা নিশ্চিত করা । এ কেন্দ্র থেকে গ্রামীণ জনপদের মানুষ খুব সহজেই তাদের বাড়ীর কাছে পরিচিত পরিবেশে জীবন ও জীবিকাভিত্তিক তথ্য ও প্রয়োজনীয় সেবা পায় ।
২০১০ সালের ১১ নভেম্বর তৎকালিন প্রধানমন্ত্রী তার কার্যালয় থেকে এবং জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি)’র প্রশাসক ও নিউজিল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মিস হেলেন ক্লার্ক ভোলা জেলার চর কুকরি মুকরি ইউনিয়ন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সারাদেশের সকল ইউনিয়ন তথ্য ও সেবাকেন্দ্র (ইউআইএসসি) একযোগে উদ্বোধন করেন। এ সকল কেন্দ্র থেকে মাসে প্রায় ৪০ লক্ষ মানুষ তথ্য ও সেবা গ্রহণ করছে। ইউআইএসসির মাধ্যমে সহজে, দ্রুত ও কম খরচে সরকারি ও বেসরকারি সেবা পাবার মাধ্যমে স্থানীয় জনগণের জীবনমানের ব্যাপক ইতিবাচক পরিবর্তন আসতে শুরু করেছে। অথচ বেশ কিছু অসৎ লোভী উদ্যোক্তাদের জন্য বাঞ্ছারামপুরে সেবামূলক এই কার্যক্রমটি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে।
‘জনগণের দোড়গোড়ায় সেবা’ -এ ম্লোগানকে সামনে রেখে ইউআইএসসির যাত্রা শুরু হয়। ইউআইএসসি প্রতিষ্ঠার ফলে সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থার প্রতিটি ক্ষেত্রে একটি অবাধ তথ্য প্রবাহ সৃষ্টি করা সম্ভবপর হয়েছে, যেখানে মানুষকে আর সেবার জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হচ্ছে না, বরং সেবাই পৌঁছে যাচ্ছে মানুষের দোরগোড়ায়। অবাধ তথ্য প্রবাহ জনগণের ক্ষমতায়নের অন্যতম পূর্বশর্ত। দেশের ৪,৫০১টি ইউনিয়ন পরিষদে তথ্য ও সেবাকেন্দ্র স্থাপনের ফলে গ্রামীণ জনগণের অবাধ তথ্য প্রবাহে অংশগ্রহণসহ দ্রুততম সময়ে তথ্য ও সেবা পাওয়ার পথ সুগম হয়েছে। আর এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে অনৈতিক ও অবৈধভাবে সাধারণ মানুষকে একপ্রকার জিম্মি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বাঞ্ছারামপুর উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের বেশ কিছু উদ্যোক্তা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলার জনৈক উদ্যোক্তা বলেন, সরকার কি আমাদের বেতন দেয়? ৫০ টাকা বেশি নিলেই আপনাদের সমস্যা। আমরা কাজ করেই নেই। তাছাড়া এলাকার নেতা, ইউপি সচিব এমনকি চেয়ারম্যানদেরও দিয়ে খাই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফরদাবাদ ইউনিয়নের জনৈক মহিলা বলেন, ভিডব্লিউবি কর্মসূচির আওতায় “স্বনির্ভরতার জন্য সহায়তা” প্রকল্পে নাম নিবন্ধনের জন্য ৫শত টাকা দিয়েছি। টাকা বেশি না দিলে নানা ঝামেলা হয়, ভুলত্রুটি করে রাখে এবং ধমকায়। একই কথা বলেন মানিকপুর ইউনিয়নের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জনৈক দুঃস্থ মহিলা।
এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য বাঞ্ছারামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌস আরার সাথে যোগাযোগ করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। 

Side banner