• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ০৬ মে, ২০২৫, ২৩ বৈশাখ ১৪৩২
Bancharampur Barta
Bongosoft Ltd.
ধরাছোঁয়ার বাইরে হেলাল কাজী

বাঞ্ছারামপুরে বাল্যবিবাহ পড়িয়ে কোটিপতি


বাঞ্ছারামপুর বার্তা | স্টাফ রিপোর্টার  মে ৫, ২০২৫, ০৮:১৪ পিএম বাঞ্ছারামপুরে বাল্যবিবাহ পড়িয়ে কোটিপতি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার সোনারামপুর ইউনিয়নের কাজী হেলাল উদ্দিনের নামে নিকাহ রেজিস্ট্রারের (কাজি) বাল্যবিবাহ নিবন্ধনসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। তার  বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দীর্ঘদিন যাবত দাবী করে আসছে এলাকাবাসী। কিন্তু প্রশাসন কোন ব্যবস্থাই গ্রহণ করেনি। ফলে জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। 
সোনারামপুর ইউনিয়নের দুই যুবক নাম প্রকাশ না করার শর্তে অভিযোগ করে বলেন, আমরা কাবিননামা তুলতে চাইলে একজনের কাছ থেকে ১১ হাজার ও অন্যজনের কাছ থেকে ১৫ হাজার টাকা দাবী করেন কাজী হেলাল উদ্দিন। 
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা তথা বাঞ্ছারামপুর উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশী বাল্য বিবাহের শিকার হন সোনারামপুর ইউনিয়নের মেয়েরা। তারপরেই রয়েছে উজানচর ও ছয়ফুল্লাকান্দি ইউনিয়ন। 
অভিযোগ রয়েছে, বাল্যবিবাহের প্রায় প্রতিটি বিয়েতে সরকার নির্ধারিত মূল্যের ২/৩ গুণ ফি আদায়, কাবিন নামা বাংলা থেকে ইংরেজি ভার্সন করায় গলা কাটা ফি আদায়, মেয়ে অপ্রাপ্ত হলে উপরের মহলকে খুশী করার কথা বলে আরও বাড়তি ফী আদায় করেন।
নিকাহ রেজিস্ট্রার বই কয়েকটি জায়গায় বর ও কনের জন্মের তারিখ লিপিবদ্ধ করা হয়না। বইয়ের প্রায় ৬০ ভাগ জায়গায় বিবাহ পড়ানো ব্যক্তি, কনে ও কাজির সই থাকেনা। কিছু জায়গায় সাক্ষীদের নাম থাকে কিন্তু সই নেই। আবার কিছু জায়গায় বর ও কনের সই ছাড়া সব কলাম ফাঁকা রাখা হয়। বেআইনি প্রক্রিয়ায় অবৈধভাবে অর্থ আদায়ের জন্য এসব অনিয়ম করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। পালিয়ে বিয়ে করা যুগলদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেন মোটা অংকের টাকা। আর এভাবেই শুন্য থেকে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যান কাজী হেলালউদ্দিন। 
সরেজমিনে শুক্রবার (২ মে) দুপুরে কয়েকজন স্থানীয় সংবাদকর্মী সোনারামপুরে কাজীর অফিসে যান। প্রায় কোটি টাকার উপর খরচ করে কাজী অফিসটি নির্মাণ করেছেন বলে দাবি করেন হেলাল উদ্দিন। এতো টাকা কোথায় পেলেন? জানতে চাইলে তিনি চুপ করে থাকেন।  
তিনি বলেন, আমি জীবনে একটিও বাল্য বিবাহ পড়াইনি। বাল্য বিবাহের জন্য দায়ী ইমামরা। অপ্রাপ্তদের কালেমা পড়িয়ে বিয়ে দেয় ইমামরা, দোষ পড়ে আমার উপর। তিনি তার সম্পদ সম্পর্কে কিছু বলতে অস্বীকার করেন।
জানা গেছে, পার্শ্ববর্তী নরসিংদী ও ঢাকায় তার বাড়ি রয়েছে। এ ছাড়া রয়েছে বিপুল পরিমাণ ব্যাংক ব্যালেন্স। নিজে বিয়ে করেছেন একাধিক। তাছাড়া তিনি নিজেও বাল্য বিয়ে করেছেন বলে জানা যায়।  
অভিযোগে জানা গেছে কাজী হেলাল উদ্দিন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা। সদ্য জামিনে কারামুক্ত উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জনি চেয়ারম্যানের সাথে ছিলো তার সখ্যতা। এছাড়াও ছাত্রদল নেতা নয়ন হত্যার পলাতক আসামী সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান শাহিন আহমেদের সাথে অত্যন্ত সুসম্পর্ক ছিল। কারাবন্দী স্থানীয় এমপি ক্যাপ্টেন এ বি তাজুল ইসলামের বাসায় নিয়মিত দেশীয় হাঁস, মুরগী, কবুতরের বাচ্চা, বিভিন্ন প্রজাতির মাছ পাঠিয়ে নিজের অবস্থান সুদৃঢ় করতে সক্ষম হন কাজী হেলালউদ্দিন। 
উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগ আমলে “নিকাহ নামা ও কাজীগিরী”র নামে নানা অনিয়ম করে রাতারাতি কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়া হেলাল কাজীর বিষয়ে সংবাদমাধ্যমে বিভিন্ন সময় সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল। অদৃশ্য কারণে কখনও প্রশাসন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। 
এ প্রসঙ্গে বাঞ্ছারামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌস আরা বলেন, সোনারামপুর ইউনিয়নের কাজী হেলাল উদ্দিন এর বিরুদ্ধে বহু অভিযোগ শুনেছি, এবিষয়ে আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা নিবো। 

Side banner