সকলের কাছে তিনি মতিন স্যার হিসেবে পরিচিত। এলাকায় সকলের কাছে সম্মানিত, পরিচিত। আব্দুল মতিন মাস্টার, একাধারে শিক্ষক, আবার সফল চাষিও বটে।
এ বছর মাত্র ৮ শতক জায়গায় ১ হাজার ৫শ টাকা ব্যয় করে দেড় মন বাদাম উৎপাদন করে সবাইকে তাক্ লাগিয়ে দেন। ৬৮ বছর বয়সেও কারো সহযোগিতা ছাড়া আয় করেন ৫ হাজার টাকা।
আব্দুল মতিন মাস্টার ব্রাক্ষণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার ছয়ফুল্লাকান্দি ইউনিয়নের ভেলানগর গ্রামের ৪নং ওয়ার্ডে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম বলাহী আব্দুল মালেক। ছেলেবেলা থেকেই তিনি অত্যন্ত মেধাবী এবং পরিশ্রমী। তিনি শ্রীকাইল ডিগ্রী কলেজ থেকে ডিগ্রী পাস করেন এবং পড়ালেখার পাশাপাশি বাবার সাথে কৃষিকাজে সহযোগিতা করতেন। বিয়ের পর জীবিকার তাগিদে তিনি ছুটে যান কুয়েত। ১৯৮৯ সালে তিনি দেশে ফিরে আসেন এবং খাল্লা উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন।
শিক্ষক হলেন মানুষ গড়ার কারিগর। শিক্ষকতার মত মহান পেশায় থেকেও তিনি মাটিকে ভালোবেসে মাটির সাথে বন্ধুত্ব করে মাটি থেকে ফলাতে থাকেন সোনালী ফসল। তিনি জানেন বাংলাদেশ কৃষি নির্ভর দেশ। তিনি তাও জানেন জমি থেকে তুলে আনা ফসল, তাজা সবজিতে প্রচুর পরিমোণে ভিটামিন ও ক্যালরী থাকে আর থাকে ভালোবাসা।
তিন মেয়ে ও দুই ছেলের জনক মতিন স্যার। বড় মেয়ে পড়াশুনা করে সংসার জীবনে গৃহিণী হিসেবে টঙ্গীতে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। বড় ছেলে মাস্টার্স শেষ করে একটা প্রাইভেট কোম্পানীর ব্যবস্থাপক (এইচ আর, এডমিন এন্ড কমপ্লায়েন্স) হিসেবে কর্মরত আছেন। সেই সাথে সাপ্লাইচেইন ম্যানেজমেন্ট এর উপর পিজিডি করছেন এবং তিনি একজন কবি ও সাহিত্যিক। আরেক মেয়ে এইচএসসি পাশ করে সংসার জীবনে গৃহিণী হিসেবে আছেন এবং তার স্বামী বিজিবিতে কর্মরত আছেন, আরেক মেয়ের গ্রামেই বিয়ে দিয়েছেন এবং ছোট ছেলে কুল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানী বাংলাদেশ লিমিটেড (মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ কেন্দ্র) এ মেডিক্যাল অফিসার হিসেবে কর্মরত আছেন।
আব্দুল মতিন মাস্টার চাকরী থেকে অবসর নেয়ার পর থেকে নিজেকে পুরোপুরি কৃষিকাজে নিয়োজিত করেন। যার ফলে তিনি শারিরিক ও মানসকিভাবে সুস্থতার সাথে সংসার পরিচালনা করে যাচ্ছেন।
কৃষক হলেন সাধক, বিজ্ঞানী শিল্পী। যার হাতের ছোঁয়ায়, পরিশ্রম ও ঘামে ফলে সোনালী ফসল। যা থেকে দেশের মানুষের খাদ্যের যোগান হয়। একজন কৃষক ভোর বেলায় বের হয় কাজে, তার গায়ে লাগে ভোরের স্নিগ্ধ হাওয়া। যে হাওয়া মানব শরীরে মহৌষধ। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাটির সাথে মাখামাখি করে, তার অগাধ পরিশ্রম ও ধৈর্যেই সারাদেশ পায় খাদ্য নির্ভরতা।
আব্দুল মতিন মাস্টার আমাদের চেতনা এবং প্রেরণা। তিনি এত পরিশ্রমের পর নিজে অসৎ পথে চলেননি এবং ছেলেমেয়েকেও সৎপথে পরিচালনা করেছেন।
আপনার মতামত লিখুন : :