নওগাঁর বদলগাছীতে প্রত্যক্ষ ভোটে পরাজিত হওয়ার পরও সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করে কলেজ ছাত্রদলের কমিটি গঠন করেছে জেলা ছাত্রদল। বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকে বিতর্ক সৃষ্টির পাশাপাশি ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে পদবঞ্চিত ছাত্রনেতাদের মাঝে। ছাত্র রাজনীতিতে নিয়মিত ছাত্রদের হাতে নেতৃত্ব তুলে দেওয়ার আলোচনা বারবার এলেও ছাত্রদলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের এমন কর্মকাণ্ডে বেশ বিব্রত স্থানীয় নেতারা।
জানা যায়, পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটের পর সাংগঠনিক কার্যক্রমে গতি বাড়াতে সারাদেশের মতো নওগাঁর ১১টি উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কমিটি গঠনে কাজ শুরু করে জেলা ছাত্রদল। যেখানে হাইকমান্ডের নির্দেশনা মেনে অনেক ক্ষেত্রেই পদ প্রত্যাশীদের জনপ্রিয়তা যাচাই করতে প্রত্যক্ষ ভোটের আয়োজন করা হয়। চলতি বছরের ০৯ মে এরই ধারাবাহিকতায় বদলগাছী সরকারি কলেজ ছাত্রদলের কমিটি গঠনে কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে প্রত্যক্ষ ভোটের আয়োজন করে জেলা ছাত্রদল। যেখানে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি নাজমুল হক, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জামীল হোসেন মুরসালিন ও কাওছার মাহমুদ এবং নওগাঁ জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মামুন বিন ইসলাম দোহার উপস্থিতিতে বদলগাছী সরকারি কলেজ ছাত্রদলে সভাপতি পদে আহসানুল হক মোস্তাকিন ৪৮ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী রবিউল ইসলাম পান ৩৮ ভোট। সাধারণ সম্পাদক পদে শোয়াইব হোসেন সাইম ৪৩ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হাসিবুর রহমান পান ৪০ ভোট।
প্রত্যক্ষ এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার পর নির্বাচিত ছাত্রনেতারা যখন কমিটির তালিকা প্রকাশের প্রহর গুনছিলেন, ঠিক সেই মুহূর্তে রবিবার (২৫ মে) রাতে নওগাঁ জেলা ছাত্রদল তাদের অফিসিয়াল ফেইসবুক আইডি থেকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জাকারিয়া হোসেন জাকির ও সাধারণ সম্পাদক মামুন বিন ইসলাম দোহা স্বাক্ষরিত প্যাডে আহসানুল হক মোস্তাকিনকে সভাপতি এবং হাসিবুর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করে ৬৫ সদস্যবিশিষ্ট আংশিক পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রকাশ করে। এরপরই ৩ ভোটে পরাজিত প্রার্থীকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা কতটুকু বৈধ সেটি নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন পদবঞ্চিত ছাত্রনেতারা।
পদবঞ্চিত ছাত্রদল নেতা শোয়াইব হোসেন সাইম বলেন, কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হওয়ার পরও আমাকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা না করে পরাজিত এক অছাত্রকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করে কমিটি গঠন করেছে জেলা ছাত্রদল। হাসিবুর রহমানের এই কলেজে কোনো ছাত্রত্ব নেই। কলেজ ছাত্রদলের কমিটিতে তার জায়গা হওয়াটাই অবৈধ। আমরা এই কমিটি মানি না।
তবে হাসিবুর রহমান বলেন, প্রত্যক্ষ ভোটে পরাজিত হয়েছিলাম এটা সত্য। তবে ওই ভোট পরবর্তীতে বাতিল করে সিলেকশনের মাধ্যমে কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। সিলেকশনেই জেলা ছাত্রদল আমাকে যোগ্য হিসেবে সাধারণ সম্পাদক পদ দিয়েছে।
ছাত্রত্ব প্রসঙ্গে জানতে চাইলে হাসিবুর রহমান বলেন, গত বছর মানবিক বিভাগ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ ৪.৪২ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছিলাম। ফলাফলটি আশানুরূপ না হওয়ায় চলতি বছরের ৬ মে আবারো এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে কলেজের মাধ্যমে শিক্ষাবোর্ডে আবেদন করেছি। তাই নিয়ম অনুযায়ী আমি অছাত্র নই।
বদলগাছী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক সরোয়ার-ই-জাহান বলেন, এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের মেয়াদ চার বছর থাকে। তাই হাসিবুর রহমানের ক্ষেত্রে তাকে অছাত্র বলা যাবে না। তবে সে অনিয়মিত শিক্ষার্থী হিসেবে গণ্য হবে এবং বোর্ডের অনুমতি পেলে আগামী এইচএসসি পরীক্ষায় আবারো অংশ নিতে পারবে। ছাত্ররাজনীতিতে পদ-পদবি পাওয়ার ক্ষেত্রে এমনটা হরহামেশা হয়েই থাকে।
বদলগাছী উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সাজু হোসেন বলেন, শুধু মাত্র নিজেদের পছন্দের লোক দিয়ে কমিটি করতে প্রত্যক্ষ ভোটের তারিখ ৩ বার পিছিয়েছিল জেলা ছাত্রদল। এরপরও যখন তারা পারলো না, তখন নিজেদের কলমের জোরে অনৈতিকভাবে ভোটে হেরে যাওয়া এক অছাত্রকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করেছে। অথচ গঠনতন্ত্রে স্পষ্টভাবে নিয়মিত ছাত্রদের অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা উল্লেখ রয়েছে। এই পকেট কমিটিকে পুরো বদলগাছী উপজেলায় অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হবে।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে নওগাঁ জেলা ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জাকারিয়া হোসেন জাকির বলেন, প্রত্যক্ষ ভোট হওয়ার সময় আমি বদলগাছীতে উপস্থিত ছিলাম না। সেখানে সাধারণ সম্পাদকের উপস্থিতিতে কেন্দ্রীয় নেতারা যেভাবে চেয়েছেন সেভাবে কমিটি করতে হয়েছে। তাৎক্ষণিক কারা ওই প্রতিষ্ঠানের নিয়মিত ছাত্র এবং কারা অনিয়মিত ছাত্র এটা যাচাইয়ের সুযোগ ছিল না।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে বাংলাদেশ ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি নাজমুল হকের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও সেটি বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
আপনার মতামত লিখুন : :