দক্ষিণ ক্যারিবিয়ান সাগরের দেশ ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগোর প্রধানমন্ত্রী কমলা পার্সাদ-বিসসেসারকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে ভেনেজুয়েলা। ক্যারিবিয়ান সাগরে মার্কিন সামরিক তৎপরতা ঘিরে দেশ দুটির মধ্যে বিরোধ চরমে পৌঁছানোর জেরেই এই পদক্ষেপ নিয়েছে দেশটি। এর ফলে তিনি আর ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ করতে পারবেন না।
বুধবার (২৯ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, মঙ্গলবার এ বিষয়ে ভেনেজুয়েলার জাতীয় পরিষদে ভোটাভুটি হয়। ভোটাভুটিতে পরিষদের সদস্যরা ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগোর প্রধানমন্ত্রী কমলাকে অবাঞ্ছিত বার পারসোনা-নন-গ্রাটা করার পক্ষে ভোট দেন। সম্প্রতি ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরোর সঙ্গে বিরোধে জড়িয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী কমলা।
আল জাজিরা বলছে, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর কার্যক্রম নিয়ে দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে তীব্র বিরোধ দেখা দেয়। মাত্র ১১ কিলোমিটার সমুদ্রসীমায় পৃথক দুটি দেশের মধ্যে সম্পর্ক বেশ কিছুদিন ধরেই টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
ত্রিনিদাদের প্রধানমন্ত্রী পার্সাদ-বিসসেসার প্রকাশ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক অভিযানের প্রশংসা করেছেন। গত সেপ্টেম্বরে প্রথম মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর তিনি বলেন, আমাদের দেশসহ অনেকে খুশি যে মার্কিন নৌবাহিনী সফলভাবে তাদের মিশন চালাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, আমি মাদক পাচারকারীদের প্রতি করুণা দেখাতে রাজি নই; যুক্তরাষ্ট্রের বাহিনী তাদের নির্মূল করুক।
তবে তার এই অবস্থানেই ক্ষুব্ধ হয় মাদুরো সরকার। জাতিসংঘে ভাষণে ভেনেজুয়েলার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইউভান গিল পিন্টো বলেন, ক্যারিবীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের অভিযান “অবৈধ ও অনৈতিক সামরিক হুমকি।”
আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই বিমান হামলাগুলো আন্তর্জাতিক আইনবিরোধী এবং অনেক ক্ষেত্রেই বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের সমতুল্য। এখন পর্যন্ত ১৪টি নৌযানের ওপর ১৩টি হামলা চালানো হয়েছে, যাতে অন্তত ৫৭ জন নিহত হয়েছেন। তবে নিহতদের পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি এবং কারও বিরুদ্ধে মাদক পাচারের সুনির্দিষ্ট প্রমাণও দেওয়া হয়নি।
এদিকে পার্সাদ-বিসসেসারকে নিষিদ্ধ ঘোষণার পর দুই দেশের সম্পর্ক আরও খারাপের দিকে গেছে। মঙ্গলবার বার্তাসংস্থা এএফপি জানায়, ত্রিনিদাদ সরকার অবৈধ অভিবাসীদের — যাদের বেশিরভাগই ভেনেজুয়েলার নাগরিক — ‘বড় পরিসরে বহিষ্কার’ করার পরিকল্পনা করছে।
একটি সরকারি নথিতে বলা হয়েছে, দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রজার আলেকজান্ডার আটক কেন্দ্রে থাকা অবৈধ অভিবাসীদের মুক্তি স্থগিত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন এবং গণভাবে বহিষ্কারের প্রস্তুতি চলছে।
এর আগের দিনই প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো ত্রিনিদাদের সঙ্গে একটি বড় গ্যাস চুক্তি ‘তাৎক্ষণিকভাবে স্থগিত’ করার ঘোষণা দেন। কারণ হিসেবে তিনি জানান, দেশটি যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধজাহাজকে আশ্রয় দিয়েছে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্র ক্যারিবীয় অঞ্চলে সাতটি যুদ্ধজাহাজ, একটি সাবমেরিন, ড্রোন ও যুদ্ধবিমান মোতায়েন করেছে। সম্প্রতি ওই অঞ্চলে হামলার মাত্রাও বেড়েছে। গত এক সপ্তাহে ছয়টি আক্রমণ চালানো হয়েছে। হামলার এলাকা এখন ক্যারিবীয় সাগর ছাড়িয়ে প্রশান্ত মহাসাগরেও ছড়িয়ে পড়েছে।
অনেকে মনে করছেন, মাদুরো সরকারকে চাপের মুখে ফেলার জন্য প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন এসব সামরিক অভিযান চালাচ্ছে। কারণ মাদুরো জালিয়াতির মাধ্যমে নির্বাচিত হয়েছেন বলে মনে করে যুক্তরাষ্ট্র।
আপনার মতামত লিখুন : :