• ঢাকা
  • সোমবার, ১৬ জুন, ২০২৫, ২ আষাঢ় ১৪৩২
Bancharampur Barta
Bongosoft Ltd.

৩য় মেঘনা সেতুর বিষয়ে জাপানের সবুজ সংকেত


বাঞ্ছারামপুর বার্তা | ফয়সল আহমেদ খান জুন ১২, ২০২৫, ০৪:৫৫ পিএম ৩য় মেঘনা  সেতুর বিষয়ে জাপানের সবুজ সংকেত

মেঘনা নদীর ওপর আরেকটি বিকল্প সেতু নির্মাণ করছে সরকার। এতে ঢাকার সঙ্গে পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোর যোগাযোগ আরও সহজ হবে। এর ফলে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার মধ্যে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপন হবে, যা ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের বিকল্প অ্যালাইনমেন্ট হিসেবে কাজ করবে। আওয়ামী সরকার পরিবর্তনের এদত অঞ্চলের মানুষের মাঝে প্রশ্ন আসে শুরু করে, কবে কিংবা আদৌ তৃতীয় মেঘনা সেতু হবে কি-না! 
সরকারের পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় ও সেতু বিভাগের একাধিক বিশ্বস্ত সুত্রে জানা গেছে, শুরুতে কোরিয়ান একটি কোম্পানি অর্থ সহায়তা দিতে চাইলেও পরে তারা সরকার বদলের সাথে সাথে সরে যায়। কিন্তু, জাপানের বেশ কয়েকটি বেসরকারি কোম্পানি কনসোর্টিয়াম এর মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারের সাথে সেতুটি করার বিষয়ে প্রাথমিকভাবে সবুজ সংকেত দিয়েছে। 
জাপানের মাধ্যমে পিপিপি- জিটুজি ভিত্তিতে নির্মাণ করা হবে সেতুটি। বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। এর সঙ্গে যুক্ত করে দুই পাশে সড়ক নির্মাণ করবে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ)।
জানা গেছে, ভুলতা-আড়াইহাজার-বাঞ্ছারামপুর সড়কের ফেরিঘাটের ১০০ মিটার উজানে নির্মাণ করা হবে তৃতীয় মেঘনা সেতুটি। এর দৈর্ঘ্য হবে ৩.১৩ কিলোমিটার। উভয় প্রান্তে ৪.৪ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হবে। নৌযান চলাচলের সুবিধার্থে সেতুর ভার্টিক্যাল ক্লিয়ারেন্স ১৮ দশমিক ৩০ মিটার ধরা হয়েছে।
বাংলাদেশ সেতু বিভাগ তাদের ওয়েব সাইটে জানিয়েছে, ভূলতা-আড়াইহাজার-বাঞ্ছারামপুর সড়কের বিশনন্দী-কড়াইকান্দি ফেরীর মাধ্যমে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাঞ্ছারামপুর ও নবীনগরের সাথে ঢাকা ও অন্যান্য জেলার সড়ক যোগাযোগ চালু রয়েছে যা দীর্ঘ সময়সাপেক্ষ এবং দুর্যোগকালীন ঝুঁকিপূর্ণ। এ পরিস্থিতি বিবেচনায় সেতু নির্মাণে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের নিজস্ব অর্থায়নে ২০২০ সালের মার্চ মাসে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা সম্পন্ন হয়। অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির ১৯ আগস্ট ২০২০ তারিখের সভায় প্রকল্পটি পিপিপি পদ্ধতিতে বাস্তবায়নের বিষয়ে নীতিগতভাবে অনুমোদিত হয়। 
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে গঠিত ঈড়হংড়ৎঃরঁস প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ ঞৎধহংধপঃরড়হ অফারংড়ৎ হিসেবে ওওঋঈ-কে নিয়োগ প্রদান করে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান এপ্রিল ২০২২ মাসে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা সম্পন্ন করেছে। সেতুর ধরণ হবে ঊীঃৎধফড়ংবফ পড়হপৎবঃব নড়ী মরৎফবৎ নৎরফমব (সধরহ ংঢ়ধহ ২০০স)। প্রকল্পের ঠএঋ চৎড়ঢ়ড়ংধষ অর্থ বিভাগ কর্তৃক নীতিগতভাবে অনুমোদিত হয়েছে। বিনিয়োগকারী বরাবর গত ১০/০৩/২০২৪ তারিখ জঋচ ইস্যু করা হয়েছে। জঋচ দাখিলের শেষ তারিখ ছিল ১০ মে ২০২৫। প্রস্তাবিত এ সেতুটি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর ও নবীনগরের সাথে ঢাকা ও অন্যান্য জেলার সরাসরি যোগাযোগ স্থাপনের মাধ্যমে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট হাইওয়ের বিকল্প অ্যালাইনমেন্ট হিসেবে কাজ করবে। সেতুটি নির্মিত হলে এই পথে ঢাকা হতে আড়াইহাজার-বাঞ্ছারামপুর হয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া বন্দরের দূরত্ব সবচেয়ে কম হবে।
বর্তমানে এ সড়কের বিশনন্দী-কড়াইকান্দি ফেরির মাধ্যমে ব্রাক্ষণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর ও নবীনগরের সঙ্গে ঢাকা ও অন্যান্য জেলার যোগাযোগ করতে হয়। দুর্যোগকালে এই রুট ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। তা ছাড়া দীর্ঘ সময়সাপেক্ষ। দীর্ঘদিন ধরেই সেতুটি নির্মাণের চেষ্টা চলছে।
জানা গেছে, ২০২০ সালের মার্চে এই সেতু নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাই করে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। পরে ওই বছরের ১৯ আগস্ট অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি প্রকল্পটি পিপিপিতে বাস্তবায়নের অনুমোদন দেয়। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সূত্রনির্ভর তথ্যে জানা গেছে জাপান ইঞ্জিনিয়ারিং এক্সপ্রেসওয়ে করপোরেশনের সমন্বয়ে গঠিত কনসোর্টিয়াম এ বছরই যেকোনো দিন সেতুটি নির্মাণে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কনসেশন চুক্তি স্বাক্ষরের পরিকল্পনা রয়েছে।
জানা গেছে, মেঘনায় তৃতীয় সেতু নির্মাণ হলে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের বিকল্প হিসেবে ব্যাপকভাবে ব্যবহার হবে এবং ঢাকা-সিলেটের ২২ কিলোমিটার ও ঢাকা-চট্টগ্রামের ২৭ কিলোমিটার দূরত্ব কমে যাবে। এলাকায় ব্যাপক শিল্পকারখানা হবে। দক্ষিণ কোরিয়ার মাধ্যমে হবে সেতু এবং এর ব্যবহার বাড়াতে সওজের অধীনে আলাদা সড়ক প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে ঢাকার সঙ্গে বাঞ্ছারামপুর-নবীনগর-আখাউড়া যোগাযোগ সহজ হবে। যাত্রী ও পণ্য পরিবহন সহজ হবে। 
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব বলেন, অনেক দিন ধরেই সেখানে সেতুটি করার চেষ্টা চলছে। ওই সেতুর পাশাপাশি সড়ক নির্মাণেও জোর দিয়েছে সরকার। এতে ঢাকা থেকে আড়াইহাজার-বাঞ্ছারামপুর হয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং ভারতের আগরতলারও দূরত্ব কমবে।
জানা গেছে, সওজের অধীনে সরকারি অর্থায়নে দুই লেনের ৩৬ কিলোমিটার একটি সড়ক তৈরি করা হবে। 
নারায়নগঞ্জের ভুলতা-আড়াইহাজার-বাঞ্ছারামপুর সড়কের বাঞ্ছারামপুর উপজেলার কড়িকান্দি ফেরিঘাট থেকে নবীনগর পর্যন্ত এ সড়কটি নির্মাণ করা হবে। সওজের কুমিল্লা জোনের অধীনে সড়কটির মানোন্নয়ন করা হবে। ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত প্রস্তাবটি পরিকল্পনা কমিশনের মাধ্যমে অনুমোদনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। শিগগির এর অনুমোদন মিলতে পারে। এ ছাড়া সড়কটি কুমিল্লার কোম্পানীগঞ্জ-নবীনগর সড়ককে যুক্ত করবে।
সওজের একটি সূত্র জানিয়েছে, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক ও বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে নির্মাণ হবে ভুলতা-বাঞ্ছারামপুর-রাধিকা সড়ক। এটি যুক্ত করবে কুমিল্লার মুরাদনগর-কোম্পানীগঞ্জ সড়ককে। সওজের অধীনে ভুলতা-আড়াইহাজার-বাঞ্ছারামপুর-নবীনগর-শিবপুর-রাধিকা মহাসড়ক হবে ভবিষ্যতে। এর দৈর্ঘ্য হবে ৮০ কিলোমিটার। আরেকটি সড়ক হবে ২৮ কিলোমিটারের; বাঞ্ছারামপুর-মুরাদনগর-কোম্পানীগঞ্জ সড়ক দুটি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিকল্প সড়ক।
ভুলতা থেকে কোম্পানীগঞ্জ হয়ে ময়নামতির দূরত্ব ৮৯ কিলোমিটার। অন্যদিকে ভুলতা থেকে মদনপুর হয়ে ময়নামতির দূরত্ব ৮৩ কিলোমিটার। এছাড়া ভুলতা থেকে মুরাদনগর (কোম্পানীগঞ্জ) সংযোগ সড়কটি ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক এবং কুমিল্লা-ব্রাক্ষণবাড়িয়া মহাসড়ককে সংযোগ করবে। ভুলতা থেকে আখাউড়া স্থলবন্দরে যোগাযোগের একটি বিকল্প সড়ক। সড়কটির উন্নয়ন হলে একদিকে কুমিল্লা হয়ে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার যাতায়াত করা যাবে। অন্যদিকে ব্রাক্ষণবাড়িয়া হয়ে আখাউড়া স্থলবন্দরে অনায়াসে যাতায়াত সম্ভব হবে।
বর্তমানে রোড ট্রান্সপোর্ট কানেকটিভিটি ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট প্রিপারেটরি ফ্যাসিলিটি প্রকল্পের আওতায় সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের ২৩টি সড়কে প্রায় ১ হাজার ৭১১ কিলোমিটার অংশে সমীক্ষা ও বিশদ নকশার কাজ করা হচ্ছে। যার অধিকাংশ শেষ হয়েছে। 
তাছাড়া ভারতের লাইন অব ক্রেডিটের (এলওসি) অর্থায়নে আশুগঞ্জ-ধরখার-আখাউড়া সড়কটি চার লেনে উন্নীত হয়েছে। এ ছাড়া ঢাকা-সিলেট চার লেন করা হচ্ছে পৃথক প্রকল্পের অধীনে। এসব কারণে ভুলতা-আড়াইহাজার-বাঞ্ছারামপুর-মুরাদনগর (কোম্পানীগঞ্জ) সড়কটির গুরুত্ব বেড়ে যাবে। সর্বোপরি প্রস্তাবিত সেতু ও সড়ক নির্মাণ হলে আখাউড়া স্থলবন্দর থেকে আগরতলা দিয়ে সেভেন সিস্টার্স রাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের অবাধ ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে। এতে আমদানি-রপ্তানি আরও বৃদ্ধির ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে।
এ বিষয়ে সওজের বিভাগ জানায়, সেতু বিভাগ বাস্তবায়ন করবে মেঘনা সেতুটি। এর সঙ্গে যুক্ত করতে সড়কগুলো করবে সওজ। এর সুফল পাবে গোটা দেশ। আশা করা হচ্ছে, ১১ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগের এই তৃতীয় মেঘনা সেতু ২০২৫ সালের মধ্যে শুরু হতে পারে।

Side banner