• ঢাকা
  • রবিবার, ০৭ ডিসেম্বর, ২০২৫, ২৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
Bancharampur Barta
Bongosoft Ltd.
বাঞ্ছারামপুরের গর্বিত সন্তান

কর্ণেল মো. মনিরুল ইসলাম পিএসসি (অব.)


বাঞ্ছারামপুর বার্তা | মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান পামেন সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২৫, ০৪:৫৫ পিএম কর্ণেল মো. মনিরুল ইসলাম পিএসসি (অব.)

তিতাস বিধৌত শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতির অন্যতম পীঠস্থান ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপূর্ব লীলাভূমি এ জেলার বাঞ্ছারামপুর উপজেলা। এই উপজেলায় জন্ম নিয়েছেন অগণিত কৃতিমান ব্যক্তি মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, সচিব, বিজ্ঞানী, শিক্ষাবিদ, কৃষিবিদ, ক্রীড়াবিদ, ব্যবসায়ী, কবি, শিল্পী, সাহিত্যিক, নাট্যকার, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, বিচারপতি ও ব্যারিস্টারসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উজ্জ্বল নক্ষত্রসম ব্যক্তিত্ব। এই জনপদের এক গর্বিত সন্তান হলেন অবসরপ্রাপ্ত কর্ণেল মো. মনিরুল ইসলাম, পিএসসি।
জন্ম ও পরিচয়
কর্ণেল (অব.) মো. মনিরুল ইসলাম, পিএসসি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার ছলিমাবাদ ইউনিয়নের তাতুয়াকান্দি গ্রামে ১৯৬৮ সালের ৮ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মরহুম আব্দুল বাতেন এবং মাতা ফজিলাতুন্নেছা। ছয় ভাইবোনের মধ্যে তিনি জ্যেষ্ঠ। তাঁর ছোট ভাই বর্তমানে বিদেশে কর্মরত।
শৈশব ও শিক্ষা
রাজধানী ঢাকায় বেড়ে ওঠা মনিরুল ইসলাম শৈশব থেকেই ছিলেন সৎ, কর্মঠ ও প্রফুল্ল স্বভাবের অধিকারী। তিনি ১৯৮৩ সালে সরকারি ল্যাবরেটরি স্কুল থেকে এসএসসি এবং ১৯৮৫ সালে ঢাকা কলেজ থেকে কৃতিত্বের সাথে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পরে ইংরেজি বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি, ডিফেন্স স্টাফ কলেজ থেকে মিলিটারি স্টাডিজে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি, জেনেভা, সুইজারল্যান্ডের World Trade Organisation (WTO) থেকে Supply Chain Management-এ ডিপ্লোমা অর্জন করেন। তাঁর এই জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও দক্ষতা তাঁকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে একজন চৌকস ও অনুকরণীয় কর্মকর্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
কর্মজীবন
মো. মনিরুল ইসলাম ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। চাকরির শুরু থেকেই তিনি মেধা, মনন, দক্ষতা ও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেন। নিজের উপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে তিনি সহকর্মী ও উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্রশংসা অর্জন করেন। কর্মজীবনের পাশাপাশি তিনি উচ্চশিক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে নিজেকে আরও সমৃদ্ধ করেন। দীর্ঘ ৩৫ বছরের কর্মজীবনে দেশ ও দেশের বাইরে বহু গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন শেষে ২০২১ সালে কর্ণেল পদ থেকে সম্মানজনকভাবে অবসর গ্রহণ করেন। 
অবসর-পরবর্তী কর্মজীবন
অবসর গ্রহণের পর তিনি ফু-ওয়াং ফুড লিমিটেড-এ চিফ অপারেটিং অফিসার (COO) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি দুটি প্রতিষ্ঠানে উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। পাশাপাশি তিনি ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে অ্যাডজাঙ্কট ফ্যাকাল্টি হিসেবে শিক্ষা খাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছেন। তদুপরি, তিনি বাঞ্ছারামপুর উপজেলা কল্যাণ সমিতির উপদেষ্টা, সরকারি ল্যাবরেটরি স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র পরিষদের আইন সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
ব্যক্তিগত জীবন
কর্ণেল (অব.) মো. মনিরুল ইসলাম বিবাহিত। তাঁর সহধর্মিণী মিসেস লুৎফুন নেছা লুপা রাজধানীর মাইলস্টোন স্কুল ও কলেজে শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত। তাঁদের এক পুত্র ও এক কন্যা সন্তান রয়েছে। কন্যা মৌমিতা ইসলাম তিথি এমবিএ অধ্যয়নরত এবং একটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। পুত্র ক্যাপ্টেন মো. তাজরিয়ান ইসলাম বর্তমানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কর্মরত।
আদর্শ ও রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি
শৈশব থেকেই তিনি মানবিক ও সামাজিক ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। মানবপ্রেম ও দেশপ্রেম তাঁর জীবনের ব্রত। সততা, নিষ্ঠা ও মানবিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠায় তিনি অঙ্গীকারবদ্ধ। সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে তিনি সর্বদা মানুষ ও মানবতার কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছেন।
রাজনীতি বিষয়ে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি অত্যন্ত ইতিবাচক। তিনি বিশ্বাস করেন, রাজনীতি কখনও অর্থ উপার্জনের মাধ্যম নয়; এটি মানুষের কল্যাণে নিবেদিত সেবামূলক ক্ষেত্র হওয়া উচিত। পেশিশক্তি, অর্থশক্তি ও স্বজনপ্রীতির প্রভাব তিনি ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেন।
শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জীবনাদর্শ তাঁর রাজনৈতিক প্রেরণার অন্যতম উৎস। উল্লেখযোগ্য যে, তিনি এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান একই বছরে সরকারি ল্যাবরেটরি স্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।
সামাজিক কর্মকাণ্ড
শৈশব থেকেই কর্ণেল মনিরুল ইসলাম একটি শান্তিপূর্ণ, সমৃদ্ধ ও মানবিক সমাজ বিনির্মাণের স্বপ্ন লালন করেছেন। বিশেষ করে নিজ উপজেলা বাঞ্ছারামপুরের মাটি ও মানুষের কল্যাণে তিনি আজীবন নিবেদিত থেকেছেন। দায়িত্বে থেকে এবং দায়িত্বের বাইরে থেকেও তিনি নানাভাবে অসংখ্য মানুষকে সহায়তা করেছেন। প্রচারবিমুখ এই মানুষটির কাছে মানুষের কল্যাণে কিছু করতে পারা মানেই সর্বোচ্চ প্রাপ্তি।
তাঁর সততা, কর্মনিষ্ঠা ও নেতৃত্ব গুণ আজকের প্রজন্মের কাছে অনুকরণীয়। স্থানীয় জনগণ আশা করেন, তাঁর সমৃদ্ধ অভিজ্ঞতা ভবিষ্যতে সমাজ ও দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।
পরিশেষে, কর্ণেল মো. মনিরুল ইসলাম, পিএসসি (অব.) নিঃসন্দেহে বাঞ্ছারামপুরের এক গর্বিত সন্তান। সততা, মেধা, কর্মনিষ্ঠা ও দেশপ্রেম দিয়ে তিনি যেমন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, তেমনি অবসর-পরবর্তী জীবনেও সমাজ ও শিক্ষা ক্ষেত্রে রেখে চলেছেন অমূল্য অবদান। তিনি শুধু বাঞ্ছারামপুরের নয়, সমগ্র জাতির জন্যই এক অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব। 

Side banner