ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার তৃণমূল পর্যায়ে গ্রাম আদালত কার্যক্রম গত কয়েক বছরে পেয়েছে নতুন গতি ও সাফল্য। জনগণের দোরগোড়ায় ন্যায়বিচার পৌঁছে দেওয়ার এই উদ্যোগকে সামনে রেখে মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হলো “গ্রাম আদালত কার্যক্রমের বার্ষিক অগ্রগতি পর্যালোচনা ও করণীয়” শীর্ষক সভা।
সভায় সভাপতিত্ব করেন স্থানীয় সরকার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উপপরিচালক শংকর কুমার বিশ্বাস। প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক মো. দিদারুল আলম। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ব্রাহ্মণবাড়িয়া, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং ইউএনডিপির প্রজেক্ট অ্যানালিস্ট সিলবা দি। এছাড়াও প্রকল্পের জেলা ব্যবস্থাপক মেরাজুল ইসলামসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
জেলার অগ্রগতি
সভায় জানানো হয়, ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের আগস্ট পর্যন্ত সময়ে জেলার অন্তর্ভুক্ত ১০০ ইউনিয়নে গ্রাম আদালতের কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে। এ সময়ে মামলা গ্রহণ, নিষ্পত্তি এবং ক্ষতিপূরণ আদায়ে এসেছে উল্লেখযোগ্য সাফল্য। জেলা প্রশাসক জানান, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও জনপ্রতিনিধিরা আন্তরিকভাবে কাজ করায় গ্রাম আদালত জনগণের আস্থা অর্জন করেছে।
ছলিমাবাদের অর্জন
এবার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল বাঞ্ছারামপুর উপজেলার ছলিমাবাদ ইউনিয়ন। মামলার নিষ্পত্তি ও ক্ষতিপূরণ আদায়ে অসাধারণ সাফল্যের কারণে ইউনিয়নটি জেলার মধ্যে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করে।
ছলিমাবাদ ইউনিয়ন পরিষদে গত এক বছরে মোট ৫৭টি মামলা গ্রহণ করা হয়। এর মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে ৫৬টি। সরাসরি দায়েরকৃত মামলা ছিল ৫৪টি এবং উচ্চ আদালত থেকে প্রেরিত মামলা ছিল ৩টি। মামলার পাশাপাশি আদায়কৃত ক্ষতিপূরণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
সম্মাননা ও চেয়ারম্যান প্যানেল এর বক্তব্য
সভায় এই অসাধারণ সাফল্যের জন্য জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে সম্মাননা গ্রহণ করেন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্যানেল মো. রফিকুল ইসলাম। সম্মাননা গ্রহণ শেষে তিনি বলেন, গ্রাম আদালত হচ্ছে জনগণের ন্যায়বিচার প্রাপ্তির অন্যতম ভরসাস্থল। আমরা সব সময় চেষ্টা করেছি যাতে সাধারণ মানুষ সহজে, দ্রুত ও খরচ ছাড়া ন্যায়বিচার পায়। ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যরা আন্তরিকভাবে মামলার নিষ্পত্তি করেছেন, যার ফলে আজ এই সাফল্য এসেছে। এই অর্জন শুধু আমার নয়, এটি ছলিমাবাদ ইউনিয়নের সকল মানুষের সম্মিলিত সাফল্য।
তিনি আরও যোগ করেন, আমরা চাই আগামী দিনে গ্রাম আদালত আরও গতিশীল হোক। ন্যায়বিচারের মাধ্যমে মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থান করবে এটাই আমাদের মূল লক্ষ্য।
গ্রাম আদালত বিষয়ক উপজেলা পর্যায়ের কো-অডিনেটর মো: ফেরদৌস আহামেদ বলেন, গ্রাম আদালতের সকল কার্যক্রমে চেয়ারম্যান প্যানেল মো: রফিকুল ইসলাম খুব আন্তরিক ও স্বচ্ছ ছিলেন।
ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা
সভায় বক্তারা জানান, গ্রাম আদালতের কার্যক্রমকে আরও শক্তিশালী করতে জনপ্রতিনিধিদের পাশাপাশি জনগণের সচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন। মামলা দায়ের ও নিষ্পত্তির প্রক্রিয়া নিয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করা হলে গ্রাম আদালতের কার্যক্রম আরও গতিশীল হবে।
ছলিমাবাদ ইউনিয়নের এ অর্জন প্রমাণ করেছে গ্রাম আদালত কেবল একটি প্রকল্প নয়, বরং এটি হচ্ছে মানুষের ন্যায়বিচার প্রাপ্তির সহজ ও কার্যকর মাধ্যম।
আপনার মতামত লিখুন : :